কর্মপদ্ধতিঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

ভূমিকা

আল্লাহর এই জমিনে সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে আল-কুরআন ও আল-হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। চমক লাগানো সাময়িক কোন উদ্দেশ্য হাসিল এর লক্ষ্য নয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য তাই চিরন্তন, শাশ্বত। সমাজের প্রতিটি অন্যায়, জাহেলিয়াত ও খোদাদ্রোহীতার বিরুদ্ধে রয়েছে এর বলিষ্ঠ ভূমিকা। বলাই-বাহুল্য, আধুনিক জাহেলিয়াতের যুগে এর চলার পথ হবে সংগ্রামমূখর। এ কঠিন ও সংগ্রামী পথ স্বাভাবিকভাবেই দাবি করে বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিভিত্তিক বাস্তব পদক্ষেপ। তাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মসূচি রচিত হয়েছে এর উদ্দেশ্য, মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও আন্দোলনের মেজাজকে সামনে রেখে। আর এই কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের জন্যে গ্রহণ করা হয়েছে এক সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি।

কর্মপদ্ধতি বা কর্মকৌশল (strategy) ছাড়া কোন আন্দোলন সফলকাম হতে পারে না। একটা আন্দোলন বা সংগঠনের সফলতার জন্য প্রয়োজন এর কর্মশক্তি, জনশক্তি এবং জনসমর্থনের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার। ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, চিন্তাশক্তি, আন্দোলনের পিছনের জনসমর্থন-সবকিছু আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। আর এসব উপাদানকে ফলপ্রসূ এবং কার্যকর খাতে কাজে লাগানোও এক বিরাট আমানত। বাতিলের পর্বতপ্রমাণ ঐশ্বর্য ও কুসংস্কারের উত্তাল তরঙ্গের সামনে মুষ্টিমেয় মর্দে মুমিনের বিজয় আল্লাহ- রাব্বুল আলামীনের খাছ রহমতেই সম্ভব-একথা সত্য। কিন্তু সঠিক কর্মপদ্ধতি অবলম্বন না করে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করলে তা যে আমানতের সুস্পষ্ট খেয়ানত এতেও কোন সন্দেহ নেই। তাই একটি বৈজ্ঞানিক এবং বাস্তবসম্মত কর্মপদ্ধতি ইসলামী আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য।

ইসলামের সাথে অন্যান্য বাতিল মতাদর্শের পার্থক্য শুধুমাত্র দর্শনগত বা তাত্ত্বিক নয়-পদ্ধতিগত দিকেও রয়েছে এর বিরাট পার্থক্য। ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত পথেই বাতিলের অপসারণ ইসলামের কাম্য। এ ব্যাপারে বাতিলের সাথে আপোষের কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতিও অন্যান্য আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি থেকে ভিন্ন। এই চরম সত্যটা আমাদের ভুললে চলবে না। অন্যান্য আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে আপাততঃ সাফল্যের প্রবণতা যেন আমাদের মন মগজকে আচ্ছন্ন করতে না পারে। আমাদের অন্তরে একথা গেঁথে নিতে হবে যে, ইসলামী আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির ভিত্তি এবং অন্যান্য আন্দোলনের ভিত্তি কখনো এক হতে পারে না। পর্যালোচনার মাধ্যমে কৌশলগত কিছু দিক হয়ত আমরা গ্রহণ করতে পারি, কিন্ত সব সময় সজাগ থাকতে হবে যেন এই গ্রহণের সময়ও ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক ভিত্তি ও নীতিবোধের উপর কোনরূপ আঘাত না আসে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি একমাত্র রাসূল (সাঃ)-এর অনুসৃত পদ্ধতি। যুগে যুগে ইসলামী রেঁনেসার ইতিহাসলব্দ অভিজ্ঞতা এই কর্মপদ্ধতিকে করেছে সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী। আর এই অভিজ্ঞতার পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী ঐতিহ্য। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শাহাদাতের পবিত্র রক্তের যোজনায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন ইতিহাস। ইসলামী ছাত্রশিবিরের বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতিও ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্বাভাবিক ফলশ্রুতি।

কর্মপদ্ধতির কতকগুলো কৌশলগত দিক রয়েছে। এই কর্মকৌশল পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীল। তাই এই কর্মকৌশল স্থায়ীভাবে উল্লেখ সম্ভব নয় আর এটা অবাস্তবও। নির্দিষ্টভাবে কর্মপদ্ধতির মোটামুটি দিকগুলো পরিবেশিত হলো। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের আলোকে কর্মীদের মাধ্যমে এবং সর্বোপরি হেকমতের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে এইসব কৌশলগত দিকও রপ্ত করতে হবে।

কর্মপদ্ধতিঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আইসিএস পাবলিকেশন

book স্ক্যান কপি ডাউনলোড